December 28, 2024, 12:50 am
দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
কুষ্টিয়ার সেই আলোচিত ‘অল পার্টি লিডার’ আবারও গ্রেফতার তৃতীয়বারের মতো র্যাবের হাতে আটক হয়েছে। এবার সাথে রয়েছে আরোও দুই সহযোগী। উদ্ধার করা হয়েছে আগ্নেয়াস্ত্র, বুলেট ও মাদকসহ দেশী একাধিক অস্ত্র সামগ্রী।
গ্রেফতার সেই অল পার্টি লিডার হলো একাধিক মামলার আসামী জেড এম সম্রাট (৩৩)। যিনি যুগপৎ আওয়ামী যুব লীগ ও জাতিয়তাবাদী ছাত্রদলের পদ ধারন করে দেশব্যাপী আলোচিত ছিলেন। অবশ্য এই মুহুর্তে কোন দলেই তার নাম নেই।
তার দুই সহযোগীর নাম দ্বীন ইসলাম রাসেল (৩৩), ও ওসমান হাসান (৩১)। জেড এম সম্রাট ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা উপজেলার মির্জাপুর এলাকার আমিরুল ইসলামের ছেলে ও দ্বীন ইসলাম রাসেল কুষ্টিয়া শহরের পশ্চিম মজমপুর এলাকার মৃত গােলাম রসুলের ছেলে এবং ওসমান হাসান কুষ্টিয়া জুগিয়া এলাকার আবুল কালামের ছেলে। সহযোগী দুজনও স¤্রাটের হাত ধরে ছাত্রদল থেকে আওয়ামী রাজনীতিতে প্রবেশ করে।
মঙ্গলবার (৫ জুলাই) দুপুর ১২ টার সময় র্যাব – ১২ কুষ্টিয়া ক্যাম্পে এক প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন র্যাবের কুষ্টিয়া ক্যাম্পের কোম্পানী কমান্ডার স্কোয়ান্ড্রন লিডার ইলিয়াস খান।
র্যাব জানায়, একটি অভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ৪ জুলাই রাতে কুষ্টিয়া শহরের আগা ইউসুফ মার্কেটের ৩ তলায় জেড এম সম্রাটের কার্যালয়ে অভিযান পরিচালনা করে ১টি ওয়ান শুটার গান, ৮ রাউন্ড গুলি, ৪ গ্রাম হেরোইন, ৪৯৫ পিস ইয়াবা, ১ বোতল বিদেশি মদ, ৮ বোতল ফেনসিডিল, ৪২০ গ্রাম গাঁজা, ৩টি গাঁজার গাছ, ৪ টি ওয়াকিটকি সেট, ১টি চাইনিজ কুড়াল, ৩টি কমান্ডো চাকু, ৪টি রামদা, ও বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্র সহ জেড এম সম্রাট ও তার দুই সহযোগীকে গ্রেফতার করা হয়।
র্যাব আরো জানায়, জেড এম সম্রাট দীর্ঘদিন যাবত সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ও মাদক ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিল। তার এই সকল কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য সে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করতো। নিজ জেলা ঝিনাইদহ হলেও বাবার কর্মসূত্রে সে ছোটবেলা থেকেই কুষ্টিয়া শহরে বসবাস করতে শুরু করে। বর্তমানে সে কোন রাজিৈনতক দলের দলের কমিটিতে না থাকলেও কুষ্টিয়ার বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের নাম ভাঙ্গিয়ে বিভিন্ন ধরণের অপরাধমূলক কর্মকান্ড চালিয়ে আসছিল। এছাড়াও সম্রাট নিজেকে র্যাবের সাের্স বলে জাহির করতো এবং এই পরিচয়ে সে লোজকজনের নিকট হতে চাঁদা আদায় করতো।
ঐ র্যাব কর্মকর্তা জানান সম্্রাট শহরের মজমপুরে অফিস খুলে সেখানে বিভিন্ন ধরণের অপকর্ম করতো এবং তার বিরোধী পক্ষের লোকজনকে ধরে নিয়ে এসে নির্যাতন চালাতো। এসকল অপকর্মের ঘনিষ্ঠ সহযােগী হিসেবে দ্বীন ইসলাম রাসেল জড়িত। ভুক্তভােগী লোকজন প্রায়ই তাদের বিরুদ্ধে র্যাব ও পুলিশের নিকট বিভিন্ন অভিযােগ নিয়ে আসতো।
র্যাব জানায় সম্রাটের বিরুদ্ধে কুষ্টিয়া মডেল থানায় অস্ত্র আইনে ৩টি ও ১টি মারমারির মামলা রয়েছে। তার সহযোগী দ্বীন ইসলাম রাসেল এর বিরুদ্ধে ৩টি মারামারির মামলা, ২টি চাঁদাবাজির মামলা, ১টি অস্ত্র মামলা ও ১টি মাদক মামলা রয়েছে এবং ওসমান হাসান এর বিরুদ্ধে ১টি মারামারির মামলা রয়েছে।
দ্য অল পার্টি জিন্দাবাদ/
বিভিন্ন সূত্র জানাচ্ছে এ জেড এম সম্রাট কখনোই পরিচয় সংকটে পড়েননি। বিগত প্রায় ১৭ বছর ধরে সবসময়ই তার কোন না কোন রাজরৈতিক পরিচয় ছিল।
চৌত্রিশ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি বছরের পর বছর ধরে পুলিশের অপরাধীর তালিকায় রয়েছেন। ২০০৬ সাল থেকে তিনি বিএনপিপন্থী ছাত্র সংগঠন জাতূয়তাবাদী ছাত্রদলের কমলাপুর ওয়ার্ডের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ২০১৪ সালে ছাত্রদলের পদে তাকা অবস্থাতেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের যুব লীগের কুষ্টিয়া শহর ইউনিটের যুগ্ম আহ্বায়ক হয়ে যান।
বিষডটি যুবলীগের নজরে এলে ২০১৫ সালে সম্রাটকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এরপর তিনি আর কোন পদ না পেলেও আওয়ামী রাজনীতির সাথেই স¤্রাট রয়ে যান। এই দলের পরিচয়েই তিনি সবকিছু করতে থাকেন।
কুষ্টিয়া বিএনপির দপ্তর ও প্রচার সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক বাচ্চু নিশ্চিত করেছেন, সম্রাট কমলাপুর ওয়ার্ড শাখা যুবদলের সভাপতি ছিলেন।
এর আগে ২০১৫ সালের ১৫ আগস্ট কুষ্টিয়ায় স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও যুবলীগ কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে একজন নিহত হওয়ার ঘটনায় ওই ব্যক্তির জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ ২১ আগস্ট শহরের থানাপাড়া এলাকায় সম্রাটের অফিসে অভিযান চালায়। অভিযানে পুলিশ তিনটি ম্যাগাজিন ও একটি গুলি উদ্ধার করে। কিন্তু সম্রাট সেখানে ছিলেন না।
তার আগে ২০০৯ সালের ২৭ জুন পুলিশ কুষ্টিয়া শহর থেকে জেড এম সম্রাটকে গ্রেফতার করে। পরে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে নিজের একটি বিদেশি পিস্তলের কথা স্বীকার করেন সম্রাট। তার স্বীকারোক্তি অনুসারে শহরের মঙ্গলবাড়িয়া এলাকার একটি বাঁশঝাড়ের নিচ থেকে পলিথিনে মোড়ানো একনলা বন্দুক উদ্ধার করে পুলিশ।
পুলিশ সূত্র জানায়, তালিকাভুক্ত অপরাধী সম্রাট কুষ্টিয়া জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন সবুজের ঘনিষ্ঠ ছিলেন, যিনি ২০১৫ সাল থেকে এখনও নিখোঁজ রয়েছেন।
সাজা /
২০০৯ সালের ঐ অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় জেড এম সম্রাটকে অস্ত্র মামলায় ১০ বছর সশ্রম কারাদন্ড দেন কুষ্টিয়ার একটি আদালত।
৫ ফেব্রæয়ারি ২০১৭ সালে কুষ্টিয়া জেলা ও দায়রা জজের দ্বিতীয় আদালতের বিচারক শেখ মোহা. আমিনুল ইসলাম এ রায় দেন।
পরে উচ্চ আদালত থেকে জামিনে সম্রাট বাইরে বের হয়ে আসেন। ২০১৬ সালেও অস্ত্র আইনে করা আরেকটি মামলায় তিনি আবারও কারাগারে যান।
এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা কোন কথা বলতে চাননি।
জেলা যুব লীগের সভাপতি রবিউল ইসলাম জানান সম্্রাটকে ানেক আগেই এসব কারনে বহিস্কার করা হয়েছে। তার সাথে এই দলের কোন সর্ম্পক নেই।
Leave a Reply